Tuesday, January 16, 2018

খুব শীতে, নিঝুম দ্বীপে (পর্ব – ৩)




৫ম দিন (৬ জানুয়ারী ২০১৮)

পর্ব - ২ পড়ুন এখানে

আজ সকাল ১০টায় নাস্তা করেই আমরা একটি ভাড়া করা মাইক্রোবাসে নোয়াখলি ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ি। হাইওয়েতে নামতেই দেখতে পেলাম কাদের যেন মিছিলো হচ্ছে তাই রাস্তায় অনেক জ্যাম। ড্রাইভার হাইওয়ের পাশ দিয়ে শর্টকাটে গ্রামের আঁকাবাঁকা সুন্দর রাস্তা দিয়ে যেতে থাকলো। আমরা পৌছালাম বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন জাদুঘরে। ছোট একটি জাদুঘর। তার পাশেই একটি লাইব্রেরী রয়েছে। তবে আফসোস আজ শনিবার থাকায় জাদুঘরটি বন্ধ। তাই জানালা দিয়ে একটু উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখে আর বাইরে কিছু সেলফি তুলেই চলে আসতে হলো। 
জাদুঘরের সামনে রিশাদ। ছবিঃ আফিয়াত।


আরো কিছুক্ষন মাইক্রোতে যাত্রার পর আমরা গেলাম বজরা শাহী মসজিদে। অনেক আগের তৈরী মসজিদ এটি। মসজিদের কারুকাজগুলো খুবই সুন্দর। মসজিদের পাশেই একটি পুকুর ও কবরস্থান আছে। আমরা মসজিদে যোহরের নামাজ আদায় করি। এখানে এক অদ্ভূত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায়। তিনি সাইকেল চালিয়ে সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। এবার তিনি সাইকেল চালিয়ে হজ্জ্ব করতে যাবেন সৌদি আরবে। কিন্তু পাকিস্তান থেকে ভিসা না পাওয়ায় তাকে এখন ইন্ডিয়া হয়ে উজবেকিস্তান, কাজাখস্থান ঘুরে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এরপর মধ্যপ্রাচ্যে যেতে হবে। 

বজরা শাহী মসজিদ। ছবি তুলেছে ইয়েন।
 ---
সাইকেল পুরো পথ পাড়ি দিয়ে হজ্জ্ব করবেন তিনি। ছবি তুলেছে পুষ্পা।

এরপর আমরা যাই দিঘীনালায়। বড় চারকোনা আকৃতির একটি দিঘী। তার পাশ দিয়ে সুন্দর বসার জায়গা রয়েছে। এখানে সবাই বিকাল কাটাতে আসে। এটি দেখেই আমার বাসার কাছের ধানমন্ডি লেকের কথা মনে পড়ে গেলো। আমরা বিকালটা লেকে কাটিয়ে তারপর রওনা দেই। 

আমরা যে অনেক পথ চলে এসেছি চাটখিল থেকে তা বুঝতেই পারেনি। যাবার সময় রাস্তা যেন আর শেষই হয়না। ম্যাপে দেখলাম চৌমুহুনী আছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। আমরা মাঈজদীর আমানিয়া হোটেলে খেতে ঢুকলাম। সেখানে ভাত, হাসের মাংস, মুরগীর মাংস, ডাল, সালাড ও কোক খাওয়া হলো। খাবার খুবই মজা ছিলো। ভরপেট খেয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম। আজিজ ভাইয়ের বাসায় পৌছালাম ৭.৩০টায়।

আমাদের ঢাকায় বাসে রওনা দেওয়ার কথা ছিলো আরো আগেই। যেতে যেতে বেশ দেরী হয়ে গেছে। এখন রওনা দিলে ঢাকায় পৌছাবো রাত ১.৩০ টা থেকে ২টায়। তাই ঠিক করলাম আমরা রাত ৩.৪০টার বাসে ঢাকা রওনা দিবো যাতে সকালে পৌছাতে পারি। সবার জন্যই বাসের টিকেট কাটা হলো। তবে আজিজ ভাই যাচ্ছেন না আমাদের সাথে। তিনি পরে আসবেন। 

ফ্রেশ হয়ে শেষবারের মত আড্ডা দিচ্ছিলাম রাতে। এই ট্যুরে প্রকৃতি যতটা না ভালো লেগেছে তার থেকে বেশি ভালো লেগেছে মানুষগুলোকে। সবাই অনেক ভালো, অনেক মজা করতে পারে। বিশেষ করে আজিজ ভাইকে ধন্যবাদ এতজনকে নোয়াখালী শহর ঘুরে দেখানোর জন্য আর থাকার ব্যবস্থার জন্য। এতদিন শুনে এসেছি নোয়াখালীর মানুষ নাকি চরম খারাপ। কিন্ত আমাদের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে আজিজ ভাই।

হিমালয় বাস এলো রাত ৩.৩০টায়। বাসা থেকে হেটে ওপারে গেলেই বাসের কাউন্টার। এত রাতে বাস ছাড়ে এখানে ভেবেছিলাম বাসে শুধু আমরাই থাকবো, কিন্তু দেখি আরো অনেকে যাত্রীই আছে। বাস চলা শুরু করলো ঢাকার উদ্দেশ্যে ৩.৫০ এ। 


যাচ্ছি ফিরে ব্যস্ত শহরে। ছবিঃ আফিয়াত।

যাত্রার শেষ ( ৭ জানুয়ারী ২০১৮)

বাসে সাধারণত আমার ঘুম হয়না। তবে অনেক টায়ার্ড থাকায় সকালের দিকে ঘুম এলো। একটু পরেই দেখি যাত্রাবাড়ি এসে গেছি। আমরা জলদি মতিঝিলে নেমে পড়লাম। বাসায় পৌছালাম সকাল ৮টায়।

ঢাকায় এসে টের পেলাম এখানে নোয়াখালী থেকে বেশি ঠান্ডা। ৬টি দিনের বিশাল এক ট্যুর দিয়ে এলাম। হাতিয়া ও তার আশেপাশের দ্বীপগুলো ভ্রমনের জন্য অসাধারণ একটি স্পট। তবে এসব দ্বীপে গেলে অবশ্যই হইহুল্লুড় কম করতে হবে। কেননা দ্বীপের মানুষেরা খুবই ধার্মিক। আর সব চরে থাকা সেইফ নয়। কিছু কিছু চর আছে সেখানে জলদস্যুরা আস্তানা করে এবং সেখানে রয়েছে শিয়ালের দলের আক্রমণের ভয়। তাই ভালোমত খোজখবর নিয়ে সব এলাকায় ঘুরতে যাওয়া উচিত। ভ্রমন করতে গিয়ে কখনোই পানিতে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন ও অন্যান্য ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা উচিত নয়। 

আবার ঢাকার ব্যস্ত জীবন শুরু হয়ে যাবে। শুরু হবে সকাল থেকে সন্ধ্যা ক্লাস আর চিরচেনা ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম। তবে মনের মাঝে থাকবে নিঝুম দ্বীপের স্মৃতিগুলো। আমি মিস করবো অসাধারণ একটি গ্রুপ, ট্রলারে আড্ডা দেওয়া, নিঝুম দ্বীপে ক্যাম্পিং, সেখানের মানুষ আর সূর্যাস্ত। মানুষ অনেক দামী গ্যাজেট কিংবা অনেক দামী জিনিস কিনে তার মাঝে সুখ খুজতে চায় কিংবা নিজের অহংকার দেখিয়ে বেড়ায়। কিন্তু আমি মনে করি নতুন অভিজ্ঞতায় খরচ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। আমার ল্যাপটপ, নতুন জুতা, মোবাইল ফোনটি হয়তো আর ১০ বছর পর নষ্ট হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে। কিন্তু এই ট্যুরগুলোর স্মৃতি আজীবন থাকবে। তাই ভালোবাসি ঘুরে বেড়াতে। 

--
কমলার চর। ছবিঃ আফিয়াত।
 ---

মনপুরা দ্বীপ উড়াউড়ি। ছবি তুলতে গিয়ে মিসিং ইয়েন। আরো ৩জন মিসিং বাইক নিয়ে ঘুরতে গিয়ে।
---
নিঝুম দ্বীপ। ছবিঃ পুষ্পা।
--
নিঝুম দ্বীপ বীচ। ছবিঃ তাসনিম।
---
লিটন। ছবিঃ সজীব

গামছা পার্টি। ছবিঃ আফিয়াত।

পর্ব - ১ পড়ুন এখানে
পর্ব - ২ পড়ুন এখানে

0 comments:

Post a Comment

Hi ! I'm Raad. And this my personal blog. Welcome to my blog.