Friday, September 5, 2014

এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে? এখন আমি কি করবো?



এসএসসি ও এইচএসসি সহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষায় এখন গণহারে জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এর মধ্যে একটি বড় অংশের ফলাফল কিন্তু জিপিএ-৫ এর নিচে থাকে। এই পোস্টটি যারা এবার পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওনি শুধুমাত্র তাদের জন্যই।

জিপিএ-৫ না পেলে স্বভাবতই হতাশ হয়ে পড়বে। যেদিকে তাকাবে সেদিকেই দেখবে সবাই তোমার থেকে ভালো ফলাফল করেছে। তোমার পরিবার থেকে এজন্য অনেক কথা শুনতে হবে। অনেক খারাপ লাগবে তোমার নিজেকে। সান্তনা পেলেও সেটাও ভালো লাগবে না। এখন রেজাল্ট তো খারাপ হলোই, এটা আর কিছু করা যাবেনা। তাই চলো দেখে আসি এই খারাপ রেজাল্ট নিয়েই এখন কি করা যায়ঃ



. কে কি বলল তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামিও না। তোমার রেজাল্ট ভালো হয়নি দেখে অনেকের কাছে অনেক বাজে কথা শুনতে হবে। রেজাল্ট কেন খারাপ হলো এর উত্তরে "আমি এটা করার সুযোগ পাইনি তাই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে", "পরীক্ষার হলে এই সমস্যা ছিলো তাই" ইত্যাদী কারন দেখানো থেকে বিরত থাকো। হয়তোবা অনেক কারনই থাকতে পারে কিন্তু সেগুলো নিয়ে আক্ষেপ করলে এখন কোন লাভ হবেনা, উল্টো মনটা খারাপ হয়ে থাকবে। সব দোষ নিজের হিসেবে মাথা পেতে নাও। রেজাল্ট নিয়ে অযথা দিনের বেশিরভাগ সময় হা-হুতাশ করে ও মন খারাপ করে ঘরের কোণে পড়ে থেকো না। এতে সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই হবেনা।

.  তোমার এই রেজাল্ট একদিন কোন কাজেই আসবে না। এই রেজাল্ট খারাপ হওয়ার ফলে তুমি যে কত হা-হুতাশ করেছো সেটাও একদিন তুমি হাসতে হাসতে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় গল্প করবে যদি তুমি একটি ভালো ভার্সিটিতে পড়তে পারো। তোমার জিপিএ কম তাই পয়েন্টও কম আসবে। অন্য ভালো রেজাল্টওয়ালাদের চেয়ে বেশি ভালো করতে হবে তোমাকে। তবে কখনো হাল ছেড়ে দিও না। অনেক কম জিপিএ পাওয়া ছেলে বা মেয়েটি গোল্ডেন পাওয়া ছেলে বা মেয়েটির থেকে ভালো রেজাল্ট করেছে ভার্সিটি এডমিশনে এমন উদাহরন অনেক আছে। হয়তোবা তুমি ছোটকাল থেকে যে স্বপ্নের ভার্সিটিতে পড়ার আশা করে এসেছো তাতে এডমিশন টেস্ট দিতে পারবে না কম জিপিএ এর জন্য। কিন্তু একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখো, তোমার ওই স্বপ্নের ভার্সিটিতে অনেকেই পড়ে। পড়াশোনা করে তারা বড় চাকরী করে, টাকা কামায়, সংসার করে, তারপর একদিন মরে যায়। খুব কম মানুষই তাদের মনে রাখে। জীবনে কিছু করতে চাইলে তা যেকোন জায়গা থেকেই করা যায়।

. তোমার যদি নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য খুবই আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই তোমার সে বিষয় নিয়ে পড়ার চেষ্টা করা উচিত। হয়তো ওমুক ভার্সিটি খুব ভালো কিন্তু তাতে তোমার পছন্দের বিষয়টি নেই। তোমার অবস্থা যদি "পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেতেই হবে" এমন না হয়ে "এই সাবজেক্টে আমার পড়তেই হবে" এমনটা হয় তাহলে তুমি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার চেষ্ট করতে পারো। এক্ষেত্রে অবশ্যই অবশ্যই তোমার আর্থিক অবস্থা চিন্তা করে দেখবে। কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার পছন্দের সাবজেক্টটি রয়েছে এবং তার মান কেমন তা খোজ নিয়ে দেখো। বড় ভাইয়া-আপুদের সাথে আলাপ করো। ইন্টারনেটে খোজ খবর নাও। কোন সাবজেক্ট কত ক্রেডিট, পাশ করে বের হতে কত টাকা লাগবে মোট, ওই সাবজেক্ট পড়ে চাকরী/ব্যবসা জীবনে কি কি করা যাবে সব ভালোমত জানো। তুমি তোমার প্রিয় বিষয়টি নিয়ে আসলেই পড়ে মজা পাবে কিনা তা বুঝার জন্য ওই বিষয়ের উপর ইন্টারনেটে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে দেখতে পারো, বই-পত্র ঘাটাঘাটি করে দেখো। যদি দেখো সবকিছু ঠিকঠাক আছে তাহলে তোমার পছন্দের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে যাও। বেসরকারী ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া খুবই সোজা। তবুও পছন্দের ভার্সিটিতে না পেলে পরবর্তী পছন্দের ভার্সিটির পছন্দের সাবজেক্টে ট্রাই করো।

. এখন আসি যাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ার ইচ্ছা তাদের কাছে। তোমার যেহেতু জিপিএ কম এবং পাবলিকে পড়ার খুবই ইচ্ছা তাই তোমাকে একটু বেশি কষ্ট করতেই হবে। যেসব ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে তার সবগুলোতে ফর্ম তুলে ফেলো। তুমি ঢাকায় থাকলে ঢাকার বাইরের ভার্সিটিগুলোও বাদ দিবে না। পরীক্ষার আগে এই কয়েকটা দিন জান-প্রান দিয়ে পড়াশোনা করো। হয়তো টাইম কম, তোমার প্রায় সব পড়াই বাকি। তবুও হাল ছেড়ে দিওনা। ভালো করে পড়লে একটা না একটাতে চান্স পাবেই তুমি।

. পরীক্ষার প্রিপারেশন নেবার দিনগুলোতে নিজের মাথা সবসময় ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করো। আমি এইদিনে এই পড়াগুলো শেষ করবো - তার লিস্ট করো প্রতিদিন সকালে উঠে। এসময় এই কোচিং সেই কোচিং এ না গিয়ে নিজে বাসায় পড়লেই তা বেশি কাজে দিবে। মডেল টেস্ট দাওশর্ট টেকনিকগুলো শিখো।

৬. যদিও আমি মনে করি পড়াশোনার সাথে অন্য কোন বিষয়ের সম্পর্ক নাই। তবুও এসময় ফেসবুক,ইন্টারনেট,টিভি,মুভি,মোবাইল ইত্যাদিতে দরকারী কাজ ছাড়া সময় ব্যয় করো না। ফেসবুক ব্যবহার করো ভার্সিটি এডমিশনের তথ্য পেতে বিভিন্ন গ্রুপের পোস্ট দেখতে, বন্ধুদের সাথে এডমিশন নিয়ে চ্যাট করতে। মনে রেখো, ইন্টারনেট থেকে একটি এডমিশন সার্কুলার ডাউনলোড করতে যেয়ে তুমি যেনো ইউটিউবের একটি মজার ভিডিও দেখে ২৫মিনিট সময় ব্যয় না করো।

৭. এসময় বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় কম ব্যয় করো বা কোথাও কম ঘুরতে যাও। আবার সারাদিন-রাত বাসার মধ্যেও বসে থেকো না। তাতে পড়ায় মন বসবে না। মানুষ প্রেম করে তার পাশে একজন যাকে সে সব সমস্যা খুলে বলতে পারবে, তার কাছে সাহায্য, অনুপ্রেরণা পাবে এর জন্য। যদি সেটা না হয়ে প্রেম আরো ঝামেলার মনে হয় তাহলে এডমিশনের আগে পর্যন্ত প্রেম করা বন্ধ রাখার চেষ্টা করো। আবার অনুপ্রেরণা পাবার জন্য সিঙ্গেলদের এসময় নতুন প্রেম করা কোনই দরকার নেই।

.  নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নাও। পরীক্ষার আগের দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় চিৎপটাং হয়ে পড়ে থাকলে কিন্তু বেইজ্জতি হয়ে যাবে। ঠিকমত খাবার খাও, কমপক্ষে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা ঘুমাও। আবার খুব বেশিও ঘুমাবে না। রাত জেগে থাকবে না, রাত জেগে পড়তে হয়না - এসব ফালতু কথা। কারো দিনের আলোতে পড়ায় মন বসে আবার কারো কারো রাতের বেলা চারদিক নীরব হয়ে গেলে ভালো পড়া হয়। তাই নিজের সুবিধামত একটি টাইমিং করে নাও। প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী চলার চেষ্টা করো।

. এসময় চট করে রেগে যাওয়া যাবে না। নিজের মাথা ঠান্ডা রাখো। খারাপ রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা না করে সময়কে কাজে লাগাও। তোমার চেয়ে বয়সে যারা বড় আছে তাদের কোন কথায় রাগ প্রকাশ করবে না। কিংবা কোন পরামর্শকে অবহেলা করবে না। সবসময় মনে রাখতে তোমার চেয়ে বয়সে বড় একজন মানুষ সে যদি মুর্খও হয় তবু জীবন নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তোমার থেকে বেশি। তাই তাদের সম্মান দাও, কথার দাম দাও।  

আমি জিপিএ-৫ পাইনাই এবং এডমিশনের সময় এরকম কোন পরামর্শ পাইনাই। তাই ভাবলাম এটা নিয়ে লিখি। যদি কারো একটু হলেও কাজে লাগে তবেই আমার এই লেখা সার্থক হবে। লেখায় কোন ভুল থাকলে কমেন্টে জানাতে পারো।

7 comments:

  1. ভাইয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখাটা পরে অনুপ্রাণিত হলাম।

    ReplyDelete
  2. ভাইয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার লেখাটা পরে অনুপ্রাণিত হলাম।

    ReplyDelete
  3. কেউ কি জানাবেন আবার রিএক্সাম দেওয়া যায় কি
    না

    ReplyDelete
  4. Enter your comment...আমার এসএসসি ২০১৫ এবং ২০১৭ তে এইসএসসি পরীক্ষা দেই রেজাল্ট ফেল।এবং ২০১৮ তে সব সাবজেক্ট পরীক্ষা দিলাম বাট আশা নুরুপ রেজাল্ট হয় নি। আমি যদি ২০১৯ ইমপ্রুভ দেই তাহলে কি মেডিকেলে পরীক্ষা দিতে পারব। আরো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারবো। কিন্তু আমি ২০১৮ সালে পাস করার পর কোথাও ফরম তুলি নি।

    ReplyDelete
  5. ২০১৬তে এইচএসসি তে ৬বিষয় fail ২০১৯ এ এইচএসসি কিভাবে দেয়া যাবে??

    ReplyDelete
  6. আমি 2017 সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে 3.42 পেয়েছি যার ফলে আমি বাংলাদেশের ভালো কোন জব সেক্টর এ পরীক্ষা দিতে পারছি না বা আবেদন করার প্রথম ক্ষেত্রে আমাকে বাদ দিয়ে দেয়া হচ্ছে সে ক্ষেত্রে আমার করনীয় কি

    ReplyDelete

Hi ! I'm Raad. And this my personal blog. Welcome to my blog.