চিকেন পক্সের সাথে চিকেনের সম্পর্ক
বেশ
কিছুদিন বাসায় সন্ধ্যা হলেই স্ন্যাকস হিসেবে চিকেন খাচ্ছিলাম। আম্মু কোথা থেকে
দেশী মুরগীর চিকেন ফ্রাই এনেছিলো। পরদিন আবার আন্টি বাসায় এসেছিলো সিপির স্পাইসি
চিকেন নিয়ে। আমারও চিকেন বেশ পছন্দ। তাই ভালোই খাচ্ছিলাম প্রতিদিন চিকেন ফ্রাই।
চিকেনের সাথে চিকেন পক্সের কি সম্পর্ক আছে তা জানা নেই। তবে এভাবে হঠাৎ করে যে
রোগটা চলে আসবে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।
সেদিন
মিডটার্ম পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষা শেষে খুব টায়ার্ড লাগছিলো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা
বাদ দিয়ে আমি জলদি বাসায় রওনা দেই। বাসে উঠে প্রচন্ড গরমে বসে ছিলাম জানালার পাশে।
হঠাৎ হাতে চোখ পড়লো। দেখি আমার হাতে ছোট ছোট গোটা উঠেছে। তেমন পাত্তা দিলাম না।
ভাবলাম ঘামাচি হবে হয়তো। ঢাকা শহরের প্রচন্ড জ্যামে বসে আছি। প্রতিদিনই জ্যামে বসে
থাকি। কিন্তু আজ খুব টায়ার্ড ও বিরক্ত লাগছে। অনেকক্ষন পরে আবার তাকালাম হাতের
দিকে। দেখি গোটাগুলো বেড়ে গিয়েছে কিছুটা। তখনই ভয় হলো আর মাথায় এলো আমার মনে হয়
চিকেন পক্স হয়েছে।
চিকেন
পক্স কি তা তখনো ঠিকমত জানিনা। বাসায় এসে জলদি গোসল করে চিকেন পক্স সম্পর্কে জানার
জন্য ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। দেখলাম এই রোগের লক্ষণগুলোর সবই মিলে যাচ্ছে আমার সাথে।
প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে তখন আর হাতে আরো কয়েকটি গোটা উঠে লাল হয়ে যাচ্ছে। সেদিন
তারাতারি শুয়ে পড়লাম। এটি চিকেন পক্স নাও হতে পারে, হয়তো গরমে ঘামাচি ধরণের কিছু
হয়েছে এই আশা করছিলাম তখনও।
পরদিন
সারা শরীরে ব্যথা এবং আরো টায়ার্ড লাগা শুরু করলো। দুপুরে ১০৩ ডিগ্রী জ্বর এলো।
প্যারাসিটামল খেলাম। কিছুক্ষন পর জ্বর কমে এলো। কিন্তু আয়নার সামনে যেয়ে আমি
হতবাক! আয়নার সামনে এটি কি!? আমার পুরো মুখ ছোট ছোট গোটায় ভরে উঠেছে। দেখতে কুৎসিত
লাগছে। হাতের দিকে তাকালাম। ভয়ংকর অবস্থা। সারা গায়ে গুটি উঠে গিয়েছে। দেরী না করে
তখনই ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার রোগ তেমন একটা আমলে না দিয়ে কিছু ওষূধ লিখে
দিলো। বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম। এই একটি অসুখ হওয়া বাকি ছিলো আমার। সবারই প্রায়
ছোটবেলায় এই চিকেন পক্স হয়ে থাকে। আমার হওয়া বাকি ছিলো। চিকেন পক্সের টিকা দিলেও
এটি জীবনে একবার হয়ে থাকে।
চিকেন
পক্স যে এতটা ভয়ংকর হতে পারে এবং এটি যে আমাকে এতটা ভোগাবে তা আগে চিন্তাও করতে
পারিনি। নামের মাঝে চিকেন আছে দেখে এই রোগকে খুব একটা পাত্তা দিতে ইচ্ছে করে না।
এছাড়াও ভেবেছিলাম ছোটদের হয়ে থাকে এই রোগ। কতই আর সমস্যা হবে। দুই-তিনদিনেই সেড়ে
যাবে। কিন্তু না! যা ভেবেছিলাম সব ছিলো মস্ত ভূল। ছোটবেলায় যাদের চিকেন পক্স হয় তারা বড্ড বড় বেচে গিয়েছে।
তাদের ভোগান্তি কম হয়। রোগের প্রকোপ তখন কম থাকে। কিন্তু বড়বেলায় এই রোগ হলেই সাড়ে
সর্বনাশ। চরম ভুগিয়ে ছাড়বে।
চিকেন
পক্সের লক্ষণ
চিকেন পক্সের লক্ষণগুলো প্রথমে বলি। সবার সবগুলো লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।
চিকেন পক্সের লক্ষণগুলো প্রথমে বলি। সবার সবগুলো লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।
১.
শরীরে খুব টায়ার্ড লাগে। কাজ করতে ইচ্ছে করে না।
২. গা
ম্যাজম্যাজ করে ও পিঠ বা ঘাড়ে ব্যথা হয়।
৩.
জ্বর আসে।
৪.
জ্বর আসার পরপরই অথবা ১-২ দিন পরে হাত ও মুখে ফুস্কুরির মত গুটি ওঠা শুরু
করে।
৫.
আস্তে আস্তে এই গুটিগুলো সারা গায়ে ছড়িয়ে যাবে। গুটিগুলো বড় হবে এবং ভেতরে পূজের
মত পানি জমা হবে। কদিন পরে প্রচন্ড চুলকানি হবে।
এই
লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব একজন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। দেরী
করলে পরে আর ডাক্তারের কাছে যাবার মত অবস্থা থাকবে না।
চিকেন
পক্স হবার পরে
চিকেন
পক্স হবার পরে সম্পুর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। আমাকে ডাক্তার দুই সপ্তাহের কমপ্লিট
বেডরেস্টে থাকতে বলেছিলো। সুতরাং পক্স হলে দুই সপ্তাহের জন্য সব কাজ ও পড়াশোনা
বন্ধ করে দিতে হবে সেটি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন। বাসায় বাইরে বের হওয়া
সম্পুর্ণ নিষেধ।
চিকেন
পক্স হবার পরে আমি বেশ কিছু ভূল করেছিলাম। এই ভূলগুলোর ফলে এই রোগে আরো বেশি কষ্ট
পেয়েছি। তাই অন্যদের বলছি এই ভূলগুলো করবে না কখনোই।
আমার
ভূলগুলো
১.
ডাক্তার গুটিগুলোতে কিছু লাগাতে নিষেধ করেছিলো। কিন্তু আমি চুলকানি সহ্য করতে না
পেরে ক্যালামাইন লোশন লাগিয়েছিলাম। এতে গুটিগুলো শুকাতে আরো বেশি সময় নিয়েছে। আরো
বেশি কষ্ট দিয়েছে। গুটিতে কোনকিছু লাগানো উচিত না।
২.
মাথার চুল বেশ বড় রেখেছিলাম। একসময় প্রচন্ড খারাপ লাগা শুরু করে আর বাসায় নাপিত
এনে মাথার চুল একদম ছোট করে কেটে ফেলি।
৩. আঙ্গুল
দিয়ে গুটিগুলো চুলকিয়েছিলাম আর কিছু গুটি ফাটিয়ে পানি বের করেছিলাম। এগুলো করা
উচিত হয়নি। এর জন্য কিছু জায়গায় দাগ থেকে যাবে।
৩য়
দিনেই আমার চিকেন পক্স শরীরের সব জায়গায় ছড়িয়ে যায়। আমার হাতের তালু, পায়ের তালু,
মুখ, মাথার স্কাল্প কোনকিছুই বাদ যায়নি। তার সাথে যোগ হয় প্রচন্ড চুলকানি। এই
চুলকানি সহ্য করার মত নয়। গলার ভেতরেও গুটি হয় এবং এতে খুব ব্যথা হয়। শক্ত খাবার
খাওয়া যেত না। আয়নায় নিজের মুখ দেখলেই ভয় পেয়ে যেতাম।
চিকেন
পক্স হওয়ার পর যা যা করবেন
১.
অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন এবং ডাক্তারের দেওয়া ওষুধগুলো নিয়ম করে খাবেন। ডাক্তার কোন
মলম দিলে তা লাগাবেন।
২.
গোসল করবেন। অনেকে বলে গোসল করা ঠিক না। কিন্তু এমন কোন কথা নেই। গোসল করলে শরীর
পরিষ্কার থাকে ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয় না। কিন্তু গোসল বাদে অন্য সময় শরীরে পানি
যতটা পারা যায় কম লাগাবেন।
৩.
শরীরে প্রচন্ড চুলকানি হবে। চুলকানি হলে কোনভাবেই নখ দিয়ে চুলকানো যাবে
না। এভাবে
চুলকালে ক্ষত সৃষ্টি হবে ও দাগ হয়ে যাবে। এই দাগ সহজে দূর হবে না।
৪.
একটি নিমের ডাল পাতাসহ রেখে দিতে হবে। চুলকানি সহ্য করতে না পারলে নিমের ডাল নিয়ে
পাতাগুলো আক্রান্ত স্থানে বুলাতে হবে। তাহলে আরাম লাগবে।
৫.
নিমের পাতা পানিতে সিদ্ধ করে বা ধুয়ে রাখতে হবে। গোসলের সময় সেই পানি গায়ে দিতে
হবে। কোনভাবেই অতিরিক্ত গরম পানি লাগাবেন না।
৬.
সবসময় ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে। শরীরে গরম লাগতে দেওয়া যাবে না।
৭.
ক্যালামাইন লোশন, কুলিং জেল, পেস্ট, নিমের পাতা বাটা ইত্যাদী আক্রান্ত স্থানে
গুটিগুলোতে লাগানোর প্রয়োজন নেই। এতে সাময়িক আরাম লাগলে ও চুলকানি থেকে নিস্তার
পেলেও আক্রান্ত স্থান ভিজে থাকবে। তাই শুকাতে বেশি সময় লাগবে।
মনে
রাখবেনঃ
আপনার
চিকেন পক্সের গুটিগুলো বড় হয়ে ভেতরে পুঁজ জমা হবে এবং তখন প্রচন্ড চুলকানি শুরু
হবে। কিছু ছোট গুটি ছোটই থাকবে আর কিছু বড় গুটি পাকা শুরু করবে। ২-৩ দিন পরেই
ছোট-বড় সব ধরণের গুটিই শুকিয়ে যেতে শুরু করবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই শরীর শুকনো
রেখে শুকিয়ে যেতে সাহায্য করুন। যত গুটিতে হাত দিবেন বা চুলকাবেন ততই এই শুকানোর
সময়টি বেশি লাগবে ও আপনি আরো বেশি কষ্ট পাবেন।
৮.
সারা দেহ পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলে ভালো হবে। ফ্যানের বাতাস সরাসরি লাগলে
চুলকানি বেশি হয়। তবে কোনভাবেই গরম লাগতে দেওয়া যাবে না। যদি সম্ভব হয় তাহলে এসির
বাতাসে থাকতে হবে। তবে জ্বর হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। জ্বর থাকলে ঠান্ডা লাগবে। তখন ঘর
গরম করে ভারী কাপড় গায়ে দিয়ে রাখবেন। তবে কখনো ঘামে ভিজে থাকবেন না। এতে গুটি আরো
বেড়ে যাবে গরমে।
৯. হাত
ও পায়ের নখ কেটে ছোট করে ফেলুন। মাথার চুল কেটে ছোট রাখুন। মাথায় গুটি হতে পারে।
চিকেন
পক্স হলে কি কি খাবেন
সাধারণ
সব খাবারই খাবেন। শুধুমাত্র গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বেগুন, চিংড়িমাছ ইত্যাদী যেসব
খাবার খেলে এলার্জী হয় সেগুলো খাবেন না। এতে চুলকানি বেশি হবে। গলায় ব্যথা হলে
স্যুপ, জাও-ভাত, ডাল ইত্যাদী বেশি খাবেন। বেশি বেশি করে সবুজ ও রঙ্গিন শাকসবজি
যেমন- গাজর, শসা, বরবটি, আলু, করল্লা, বিভিন্ন শাক খেতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন কিছু
ফল খেলে গুটিগুলো দ্রুত শুকাবে। ফল হিসেবে কলা, নাশপাতি, আঙ্গুর, কমলা, পেয়ারা
খেতে পারেন। ডাবের পানি খুবই উপকারী। গলায় গুটি উঠলে ঠান্ডা জিনিস যেমন- লেবুর
শরবত, আইসক্রিম এগুলো খেলে আরাম লাগবে। শরীরে শক্তির জন্য প্রতিদিন সকালে ডিম ও
দুধ খাবেন অবশ্যই। নিয়ম মেনে প্রতিবেলা পুষ্টিকর খাবার আর ফল খেলে রোগ খুব দ্রুত
সেড়ে উঠবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার বর্জন করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
চিকেন
পক্স হলে যা যা অবশ্যই করবেন না
১.
অবশ্যই বাসা থেকে বের হবেন না। এটি বায়ুর মাধ্যমে সহজে ছড়িয়ে যায়। বাসায় থাকবেন
সবসময়।
২. চুলকানো
সম্পুর্ণ নিষেধ। যত কষ্টই হোক সহ্য করবেন। গুটি ওঠার পর ২/৩ দিন যাবে অমানুষিক
কষ্টের মধ্যে দিয়ে। এর মাঝে যাই হবে না কেন চুলকাবেন না। চুলকানি উঠলে অন্য কিছু
নিয়ে ব্যস্ত হবেন। চুলকানিতে পাত্তা দিবেন না। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করবেন।
৩.
বারবার আয়নায় চেহারা দেখা, গুটি নাড়াচাড়া করা, শরীরে হাত বুলানো – এগুলো করবেন না।
৪.
তৈলাক্ত খাবার ও এলার্জী হয় এমন খাবার যেমন গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ মাছ, বেগুন
ইত্যাদী খাবেন না।
৫.
অতিরিক্ত গরম লাগাবেন না শরীরে।
৬.
বিভিন্ন গ্রাম্য পুরাতন কুসংস্কারে কান দিবেন না। বয়স্ক মানুষেরা এসব আপনাকে বলতে
পারে। সোনা-রুপার পানিতে ঘর ধোয়া, শরীর ধোয়া, দুধ-ডিম খেতে না দেওয়া, গোসল না
করানো, বিভিন্ন তেল মালিশ ইত্যাদী কুসংস্কার থেকে দূরে থাকুন।
দুই
সপ্তাহ পর এখন আমার চিকেন পক্স সেড়ে গিয়েছে। তবে গুটির দাগগুলো এখনো রয়েই গেছে।
আস্তে আস্তে চলে যাবে আশা করা যায়। ইন্টারনেট ঘেটে জানলাম চিকেন পক্সের সাথে চিকেনের কোন সম্পর্ক নেই।
তাই আমি এখন মনের সুখে আরো চিকেন ফ্রাই খেতে পারবো। তবে প্রতিবার চিকেন খাওয়ার আগে
চিকেন পক্সে আক্রান্ত আসহায় দিনগুলোর কথা মনে পরবে। এই ভয়ানক রোগটি যেন পৃথিবী
থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এই আশা করি।
ভাই আমি এখন এই রোগ এ ভুগতেছি..
ReplyDeleteআমি এখন এই রোগে ভুগতেছি,,বুঝতে পারছি নাহ কি করবো..!!
Deleteআমিও রে ভাই,,,আপনার কি কমছে?
Deleteভাই আমিও ভাই। চলতেছে ভাই 😭
Deleteভাই আমিও fb id: Asif Mohammed Alfayed
ReplyDeleteএটা কি হল
ReplyDeleteআপনি জে বলছেন গ্রাম্য মুরুব্বিরা জেটা বলে ওটা কুসংস্কার, আসলে তাদের মত করলে তো মাত্র ৩/৪ দিনেই সুস্ত হওয়া জায়, আর আপনি তো হইছেন ২ সপ্তায়
ReplyDeletesobaike khoma korun Allah
ReplyDelete