গল্পের বই আবার মাইনষে পড়ে?
আগে প্রচুর বই পড়তাম।
ছোটবেলা থেকেই যখন জেনেছি পড়াশোনার বই বাদেও আরো বই আছে যেগুলো পড়ে মজা পাওয়া যায়
সেদিন থেকেই বই পড়ার শুরু। ক্লাস টু থেকেই গল্পের বইয়ের বিশাল ফ্যান হয়ে গেলাম।
একটা মাঝারি আকারের বই ধরে এক বসায় পড়ে শেষ করে দিতাম। কখনো রাত পার হয়ে দিন হয়ে যেতো।
পরের দিন সকালে স্কুল মিস হতো।
আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম।
তখন বাইরে যাওয়া আসা করতাম কিছুটা। টিফিনের টাকা জমিয়ে গল্পের বই কিনতাম। স্কুলের
সামনে নানান রকম জিনিসের দোকান বসতো। সেখানে মাত্র ৫ টাকায় ছোট্ট গল্পের বই পাওয়া
যেত। খুবই সস্তাদরের কাগজে প্রিন্ট করা ছিলো বইগুলো। রাক্ষস-খোক্ষসের কাহিনী,
ভূতের কাহিনী, হাসির কৌতুক এসব নাম ছিলো
বইগুলোর। কাহিনী অখাদ্য হলেও সেগুলো পড়তাম মাঝে মাঝেই। এরপর পরিচয় হলো বইমেলার সাথে। আম্মুর সাথেই প্রথম বইমেলায় যাওয়া। ঠিক মনে নাই কবে। তবে এই বইমেলা নামক আজব জায়গাটা আমার বড়ই পছন্দ হলো। এত্ত এত্ত বই এক জায়গায় একসাথে... এত্ত মানুষ বই কিনছে ! এরপর থেকে বইমেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করতাম। মেলা থেকে বস্তা ভরে বই কিনে আনতাম। এক সপ্তাহেই পড়ে শেষ করে ফেলতাম। তারপর আবার বইয়ের জন্য হাহাকার শুরু হতো।
বইগুলোর। কাহিনী অখাদ্য হলেও সেগুলো পড়তাম মাঝে মাঝেই। এরপর পরিচয় হলো বইমেলার সাথে। আম্মুর সাথেই প্রথম বইমেলায় যাওয়া। ঠিক মনে নাই কবে। তবে এই বইমেলা নামক আজব জায়গাটা আমার বড়ই পছন্দ হলো। এত্ত এত্ত বই এক জায়গায় একসাথে... এত্ত মানুষ বই কিনছে ! এরপর থেকে বইমেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করতাম। মেলা থেকে বস্তা ভরে বই কিনে আনতাম। এক সপ্তাহেই পড়ে শেষ করে ফেলতাম। তারপর আবার বইয়ের জন্য হাহাকার শুরু হতো।
বই বেশীরভাগ নিজেই কিনে
পড়তাম। মানুষের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়াটা আমার কাছে ভালো লাগতো না। অনেক সময় দেখা
যেত কারো কাছ থেকে বই ধার করে এনেছি। বইটা খুবই ভালো লেগেছে। কালকশনে রাখার মত বই।
কিন্তু সেটা ফেরত দিতে হতো আর অনেক সময়ই সে বই বাজারে পাওয়া যেত না, পাওয়া গেলেও
সেটা কেনার টাকা থাকতো না। আরেকটা ব্যাপার হলো যে কেউ যখন আমার প্রিয় কোন বই পড়ার
জন্য ধার করে নিয়ে যেত সেটা খুব খারাপ লাগতো। মানুষ আরেকজন মানুষকে যেমন মিস করে
বই ধার নিলে আমিও সেই বইটাকে মিস করতাম। হোক সেটা ৪-৫ বার পড়া কিংবা হোক সেটা তেমন
ভালো কোন বই নয়। আর আমার বন্ধুরা বই একবার নিলেই হয়েছে। সেটা আর ফেরত পাওয়া যেত
না। সবচেয়ে খারাপ লাগতো এটা ভেবে যে, অনেক বন্ধুই আমার বাসায় এসে বই নিয়ে যেত।
কিন্তু বই নিয়ে তারা পড়তো না। নিজের কাছে রেখে দিতো কিংবা হারিয়ে ফেলতো। কয়েকদিন
পর সেই বইয়ের কোন কাহিনীর কথা বললে বলতো যে সে ঐ বই পড়েইনি। অনেকে ভাব দেখাতো যে
হ্যা পড়েছে। কিন্তু আমিতো বুঝতাম যে সে বই নিয়ে হারিয়ে ফেলেছি এখন ভান করছে পড়ে
শেষ করার। এভাবেই আমার বুক সেলফের বইগুলো কমতে কমতে অর্ধেক হয়ে গেলো।
ক্লাস সিক্সের দিকে খোজ
পেলাম আজব বইয়ের গাড়ি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের। বাসা থেকে
খানিক দূরে সপ্তাহে একদিন আসতো এই গাড়ি। সপ্তাহে একটা করে বই নেওয়া যেত। পরের
সপ্তাহে সেই বই ফেরত দিয়ে আরেকটা নতুন বই নেওয়া যেত। প্রতি সপ্তাহের এই দিনের জন্য
আমি অপেক্ষা করতাম। আমার বইপ্রেমী আঙ্কেল আমাকে এর খোজ দিয়েছিলো ও আমাকে সেখানের
সদস্য করে দিয়েছিলো।
আমি বই পড়তাম না শুধু। বইও
লিখেছিলাম কয়েকটি। ছোট ছোট নোটপ্যাডের কাগজ ছিড়ে কিছু ছোট ছোট গল্প বা জোকস
লিখতাম। মাঝে মাঝে কমিক্সও আকাঁর চেষ্টা করতাম। বড় সাইজের কাগজ দিয়েও কিছু বই
লিখেছিলাম। এগুলো বইয়ে ৮-১২ পেইজ থাকতো। তবে বেশিরভাগ গল্পেই আমার পড়া অন্য কোন বই
বা চরিত্রের মিল ছিলো। আমার লেখা মোটামুটি ভালো মানের বইয়ের মাঝে “জনু-মনু
ডিটেক্টিভ কোম্পানী” ও “ক্যাপ্টেন সানু” এই বই দুটির কথা মনে আছে। এই বই দুটি বেশ
মোটা হয়েছিলো। এর ভেতরে কয়েকটি ছোট গল্প ছিলো, ছোট মজার ইন্টারভিউ, জোকস ছিলো আর
সবার শেষে থাকতো মূল গল্প। সবচেয়ে মজার কথা হলো ম্যাগাজিনের মত আমার বইয়ে স্পন্সরও
ছিলো। ম্যাগী নুডলস, ইউনিসেফ, মেরিডিয়ান চিপস এগুলোর বানানো বিজ্ঞাপন থাকতো কিছু
পেইজে। বইগুলো সবই আছে এখনো। কাউকে দেখাই না।
ম্যাগাজিনের মধ্যে উন্মাদ
ছিলো আমার ফেভারেট একটা ম্যাগাজিন। এছাড়া প্রথম-আলো পেপারের সাথে আলপিন ছিলো অতূলনীয়।
প্রতি সোমবার (খুব সম্ভবত) পেপার দিলেই সাথে সাথে হাতে তুলে নিতাম আলপিন। আলপিনের
রম্যগুলো, সারকাজমগুলো, কার্টুনগুলো ছিলো অসাধারন। আলপিনে আমার কৌতুক ছাপা হয়েছিলো
একবার। সেই আলপিনটা এখনো আছে। এছাড়া পেপারের সাথে দেওয়া গোল্লাছুট ট্যাবলয়েডটা
পড়তাম। এখানেও আমার লেখা ছাপা হয়েছিলো। তবে একসময় গোল্লাছুট বেশি বাচ্চাদের মনে
হতে শুরু করে আমার। আলপিন বন্ধ হয়ে যায় এক হাস্যকর কারণে। আলপিনে একটি কার্টুন
দেওয়া হয়।
কার্টুনটি ছিলো এরকম-
একজন মৌলভি (দাড়িওয়ালা লোক আঁকা
আরকি) একজন বাচ্চা ছেলেকে বলছে, “তোমার নাম কি?”
ছেলেটি বলল, “আমার নাম রুবেল” (কি নাম ছিলো মনে নাই। আন্দাজে দিলাম একটা)।
ছেলেটি বলল, “আমার নাম রুবেল” (কি নাম ছিলো মনে নাই। আন্দাজে দিলাম একটা)।
মৌলভিঃ নামের আগে মোহাম্মদ
লাগাতে হয় জানো না? বলবে মোহাম্মদ রুবেল। তোমার পাশে ওটা বিড়াল নাকি?
রুবেলঃ জ্বী, ওর নাম মোহাম্মদ বিড়াল।
রুবেলঃ জ্বী, ওর নাম মোহাম্মদ বিড়াল।
এই এক কার্টুনেই আন্দোলন
শুরু করে দিলো ইসলামী ছাত্রশিবির সহ দেশের অন্যান্য ইসলাম রক্ষাকারী (!) দলগুলো।
ফলাফল হলো আলপিন বন্ধ। আলপিন বন্ধের কয়দিন পর অবশ্য রস+আলো নামের পত্রিকা এসেছিলো।
কিন্তু সেটা ছিলো পাঠককে জোড় করে হাসানোর চেষ্টা। মোটেই ভালো ছিলো না। উন্মাদও আস্তে
আস্তে একঘেয়ে হয়ে গেলো। এটি পড়েও মনে হতে শুরু করলো যে আমাকে জোড় করে হাসানোর
চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসায় যায়যায়দিন পত্রিকা পড়তো। কিন্তু সেটা আমার বয়স অনুযায়ী
একটু বড়দের জন্য ছিলো। আমি পড়তাম। কিন্তু তেমন একটা ভালো লাগতো না। আস্তে আস্তে
ম্যাগাজিনের উপর থেকে মন উঠে গেলো।
যায়যায়দিন পত্রিকার একটা
বিজ্ঞাপনের কথা এখনো মনে আছে। খুব সম্ভবত তিশির তেলের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনে একটা
বেজির মত জন্তু থাকতো আর রোগ সাড়াবার জন্য তেলের কথা বলা হতো। প্রতিবার পত্রিকার
সাথেই ছোট্ট করে এই তেলের একটা বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপনটা খুবই আজব ছিলো।
স্কুলে থাকতে ধুমিয়ে গল্পের
বই পড়েছি। বেশিরভাগ বই-ই অবশ্য ছিলো কিশোর উপন্যাস, ডিটেক্টিভ বা সায়েন্স ফিকশন।
সায়েন্স ফিকশন আমাকে তেমন না টানলেও টেনেছে ডিটেক্টিভ বই। ফেলুদা, শার্লক হোমস,
কাকাবাবু, ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজ সব পড়া শেষ স্কুলের ক্লাস এইটের আগেই। এরপর শুরু
হলো এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার জন্য কম্পিউটার বন্ধ করা হলো। বই পড়াও বন্ধ করা হলো।
বেশ কয়েক মাস বই পড়িনি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেও আর তেমন বই পড়া হলোনা। বেশ কয়েক
মাস গ্যাপ থাকার ফলে গল্পের বইকে মিস করাটা কমে গেলো। ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কম্পিউটার,
ইন্টারনেট, গেমিং, ফেসবুক ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা নিয়ে।
তবে তারপরেও কম-বেশি বই
পড়তাম। কিশোর উপন্যাসগুলো এসময় তেমন ভালো লাগতো না। বিদেশী রাইটারদের বই পড়া শুরু
করলাম। একটু বড়দের বই পড়া শুরু করলাম। বই পড়ার ইন্টারেস্ট চলে যাবার আরেকটা কারণ
হলো বন্ধুরা। বন্ধুরা সবাই বই পড়া কমিয়ে দিলো। বই নিয়ে কোন আলাপ হতোনা ক্লাসে আর।
আমার বাসা থেকে বই নিয়ে যাওয়াটাও কমে গেলো। চোখের পলকেই সামনে এসে পড়লো এইচএসসি
পরীক্ষা, এক বিরাটাকার যমদূত। কোচিং, ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্ট এর ভিড়ে হারিয়ে
গেলাম। বই পড়ার মত কোন সময়ই থাকলো না।
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে আমি
সেই “সারাদিন ঘরের কোণে বসে বই পড়া আর ভিডিও গেইম খেলা কিশোর” - টি থাকলাম না।
বাইরে বের হতাম বেশি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম, ঘুরতে যেতাম। কম্পিউটারের সামনেই
বেশি সময় বসে থাকতাম। এইচএসসির আগে ও পড়ে প্রচুর ফেসবুক ব্যবহার করতাম। বিভিন্ন
বাংলা ব্লগের লেখা পড়তাম। ব্লগিং করতাম। বড়জোর সময় পেলে এক-দুইটা ইবুক পড়তাম।
এইচএসসি রেজাল্ট খারাপ
করলাম। ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। ভার্সিটি জীবন শুরু হলো। সকালে বাসে ঝুলে ঝুলে দুই
ঘন্টা জ্যামে দাঁড়িয়ে ক্লাসে যাও আর সন্ধ্যায় আবার একইভাবে ঝুলতে ঝুলতে বাসায় আসো।
বই পড়ার মত মানসিক অবস্থা ও পরিবেশ তখন আর নেই।
একসময় বাংলা ব্লগগুলোও মৃত
হয়ে গেলো। আগের মত কেউ ভালো লেখা দেয়না। দিলেও অনেক রাখ-ঢাক করে অনেক কিছু ভেবে
পোস্ট দেয়। কেননা ব্লগারদের ধরপাকড় ও কল্লা-কাটা শুরু হয়েছে তখন থেকেই। তাই ব্লগ
পড়াও বাদ দিলাম। বাকি থাকলো ফেসবুক। ফেসবুকে কিছু সেলেব্রেটি ছিলো। বাংলায় অনেক বড়
বড় পোস্ট লিখতো। অনেক আশার কথা, হতাশার কথা, জীবনের কথা, আক্রোশের কথা বলতো
ফেসবুকে। তাদের লেখা পড়তাম। ভালো লাগতো। Extreme Noise নামে একটি ফেসবুক পেইজ ছিলো
খুব ভালো কিছু লেখা দিত। এছাড়াও আরো বেশ কিছু ফেসবুক পেইজ ছিলো অনেক ভালো লেখা
পোস্ট করতো। এইডা কিছু হইলো, টিনের চালে কাক আমিতো অবাক, আল্লাহ তুমি দড়ি ফালাও
আমারে উডাই নাও – এরকম নামের কিছু পেইজ ছিলো। মনে নাই সবগুলো। একসময় এই পেইজগুলো
হারিয়ে যায়। বেশ কিছু পেইজের এডমিনকে চিনতাম। আমি নিজেও এরকম কিছু টেকনোলজী
রিলেটেড পেইজ চালাতাম তাই। এই পেইজ এডমিনগুলো শুধুমাত্র মানুষকে হাসানোর জন্য বা
ভালো কিছু কথা বলার জন্য বিশাল বিশাল বাংলা পোস্ট দিতো পেইজে। এতে তারা কোন টাকা
পেতো না, কোন সম্মান বা বাহবাও পেত না। সবার চোখের আড়ালে থাকতো তারা।
তখন টেকনোলজী ব্লগের লেখা
পড়তাম ও টেক ব্লগিং করতাম। বেশ কিছু ব্লগে আমার লেখা ছাপা হতো। এই লেখালেখির কাজে
বেশ মজা পেলাম। ফেসবুকের সেলেব্রেটিদের লেখাগুলো পড়া আস্তে আস্তে কমে গেলো। এক
নাম্বার কারণ হলো যে, সময় পেতাম না। আর দুই নাম্বার হলো, বুঝতে শুরু করলাম এসব
সেলেব্রেটিদের বেশিরভাগই লেখালেখি করে থাকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। আর
রিয়েল লাইফে তারা সবাই খুব একটা ভালো মানুষ না। তিন নাম্বার কারন হল, ফেসবুক এখন
আর চায়না আপনি লেখা যুক্ত পোস্টগুলো বেশি পড়ুন। ফেসবুক আপনাকে ছবি সংযুক্ত
পোস্টগুলো বেশি বেশি করে দেখায়। আপনিও এক সময়ে সেই ছবিতে মজা পেয়ে গেলেন। আর
ইন্টারনেট এখন আগের থেকে অনেক দ্রুত হয়েছে। সুতরাং ইউটিউবে ভিডিও বাফারিং ছাড়াই
দেখা যায়। কোন জিনিস সার্চ করে তিন-চার পাতার আর্টিকেল পড়ার চেয়ে সহজেই একটা পনেরো
মিনিটের ভিডিও দেখা যায়। কিংবা একটা বই পড়ার সময়টুকুতে একটা টান টান উত্তেজনার
মুভি বিছানায় আধশোয়া হয়ে দেখে ফেলা যায়। তাই আমাদের মস্তিস্ক এই আলসেমীর কাজগুলোই
বেছে নিলো। কেননা সে হলো মহা ফাঁকিবাজ।
এভাবেই হারিয়ে গেলাম আমি বই
পড়া থেকে। বইগুলো বুক সেলফের এক কোণে পড়ে থাকলো। অর্ধেক খালি বুক সেলফটা অর্ধেকই
রইলো। আর বই কমলো না, বই বাড়লোও না। আশেপাশে তাকাই, কেউ বই পড়েনা। শুধু পড়াশোনার বই
পড়ে। আড্ডায় কেউ গল্প করে না কাল রাতে একটা অসাধারন বই পড়েছে তার কাহিনী নিয়ে।
এখনও বইমেলা হলে আমি বইমেলায়
যাই। প্রতিবারই মেলা থেকে বই কিনি। কিন্তু বইগুলো পড়া যেন আর শেষই হয়না। এক বছরের
কেনা বইগুলো পড়তে পড়তেই আরেক বছরের বইমেলা এসে যায়। আগে আম্মুর সাথে বইমেলায়
যেতাম। তারপর যেতাম বন্ধুদের সাথে। এখন আর বন্ধুদেরকেও পাইনা সাথে যাওয়ার জন্য।
মাঝে মাঝে একাই যাই।
আমি খুব খুব মিস করি বই
পড়াকে। এই বই পড়া আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে জীবনের সংকময় মূহূর্তগুলোয় মাথা ঠান্ডা
রেখে চিন্তা করতে হয়। বই পড়া আমাকে শিখিয়েছি কিভাবে একটা ছোটখাটো শহরে মানুষ,
বাড়ি-ঘরসহ সব খুটিনাটি নিজে কল্পনা করে সেই কল্পনাকে নিজের ইচ্ছামত চালানো যায়। বই
পড়া আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে সুন্দর করে বাংলায় নিজের চিন্তা প্রকাশ করতে হয়। কত
কিছু যে জেনেছি, কত কিছু যে কল্পনা করেছি এই বই পড়ে তার ইয়ত্তা নেই।
আমি এখন খুব চেষ্টা করি আবার
এই ভালো অভ্যাসটাকে ফিরে পাওয়ার। ফেব্রুয়ারী চলে গিয়ে এখন মে মাস। বইমেলা থেকে
কেনা বইগুলো এখনও শেষ হয়নি। সময় পেলেই মনটাকে শান্ত করে পড়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া
একটি ইবুক রিডার কিনেছি। বাসে জ্যামে বসে বসে বই পড়ার চেষ্টা করি। আমাজনের Goodreads
নামের একটা অ্যাপ আছে। সেটায় বই পড়া শেষ হলে রেটিং দেই, নিজের শেলফে জমা করি।
সেখানে বুক রিডিং চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহন করেছি। এই বছরের টার্গেট ৬৫ টা বই পড়ে শেষ
করা। এই ব্লগপোস্ট লেখা পর্যন্ত ৬টা বই পড়া শেষ হয়েছে। এছাড়া আমি ইন্সটাগ্রামকে
ব্যবহার করি আমার বই পড়ার শো-অফ হিসেবে। কোন বই পড়ে বেশ ভালো লাগলে সেটার ছবি তুলে
শেয়ার করি সবার সাথে। যাতে আমাকে দেখে আরো একজন মানুষ হলেও এই ভালো অভ্যাসটা আয়ত্ত
করার চেষ্টা করে। #AmarPoraBoi হ্যাশট্যাগে গেলেই দেখা যাবে বইগুলো। এই টেকনোলজীর কারনেই খানিকটা বই পড়ার অভ্যাস শেষ হয়েছে আমার।
আবার এই টেকনোলজী ব্যবহার করেই আমি তা ফিরিয়ে আনতে চাই। সেটা ব্যবহার করেই সবার
কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। আমি প্রযুক্তিকে ভালোবাসি। বই বিক্রি করেই অ্যামাজন হয়েছে
আজকের এই বিরাট টেক জায়ান্ট। বাংলাদেশে এসেছে রকমারি ডটকম। রকমারিকে দেখে এসেছে
আরো কিছু অনলাইন বুক স্টোর। অনলাইনে অর্ডার দিলেই দরজায় বই এসে যাচ্ছে। বই পড়ার
অ্যাপ বানানো হচ্ছে। লেখকেরা অনলাইনে ই-বুক বের করছে। এমনকি এসব অনলাইন বই থেকে
তারা টাকাও কামাচ্ছে বেশ। প্রযুক্তি নিয়ে আমি আশাবাদী।
ভার্সিটি ভর্তি হয়ে আমি
প্রথম কিছু বন্ধু পাই যারা কোনদিন বইমেলায় যায়নি। আমি সেবার ফেব্রুয়ারী মাসে তাদের
বলি সবাই মিলে বইমেলায় যেতে। তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি কাউকে খুন
করতে বলেছি। সে কি হাসি তাদের! বইমেলায় মানুষ যায় ! বই পড়ে কি হবে এমন সব কথা
উঠলো। তবে আমি সার্থক হই এর পরের বইমেলায় তাদের নিয়ে যেতে ও বই কেনাতে। সেই বই
তারা পড়েছে কিনা জানিনা। তবে তারা অন্তত সৌজন্যতার খাতিরে হলেও বলেছে যে বইমেলায়
এসে বেশ ভাল লেগেছে। শেষে একটা কথাই বলতে চাই, যে কখনো গল্পের বই পড়েনাই তার
বিন্দুমাত্র আইডিয়া নাই যে সে কি মজা মিস করেছে। তার মত হতভাগা আর হয়না।
0 comments:
Post a Comment