২১-২২ বছরের জীবন যেমন
২১-২২ বছরের এই সময়টাতে একটা মানুষ না থাকে কিশোর, না থাকে যুবক।
বাইরের দেশগুলোতে ১৮ বছর বয়স হলেই সন্তানেরা বাবা-মা থেকে দূরে থাকতে শুরু করে।
সেদেশের ছেলেমেয়েরা ১৮+ হলেই অনেক বেশি ম্যাচিউরড হয়ে যায়।
নিজের রেসপন্সিবিলিটি
নিজেই নিতে পারে, নিজের লাইফের কঠিন ডিসিশানগুলো নিজেই নিতে পারে। এজন্যই সেদেশে
নিয়ম বাবা-মা থেকে আলাদা থাকার। কিন্তু আমাদের দেশের ১৮+ বয়স মানে মাত্র ছেলে বা
মেয়ের এখন উড়াউড়ি করার বয়স। এ বয়সে এইচএসসি পাশ করে ভার্সিটি উঠে। ভার্সিটি লেভেলে
উঠে তারা একেকজন একেকদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখনও এতটা রেস্পনসিবল হয়ে ওঠে না যে নিজের
লাইফের সবকিছু নিজেই চালিয়ে নিতে পারবে বা তার পরিবার লাগবে না- এমন হয়না।
কিন্তু ২১-২২ বছরে এসে সবার মাঝেই একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
হঠাৎ আবিষ্কার করে সে বড় হয়ে গেছে। সস্তা হাসি-তামাশা আর ভালো লাগেনা। বন্ধুদের
সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা অতটা জমে না। ক্যারিয়ারের চিন্তা এসে ভর করে মনে। কি
করছে, কি করা উচিত, কি করলে ভবিষ্যত ভালো হবে এসব নানান চিন্তা এসে ভর করে রাতে।
এসময় মানুষকে বুঝতে পারা যায়। কোন মানুষটি কেমন, কে তোমার ভালো চায় আর কে তোমার
মন্দ চায়, কাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত আর কাকে কম দেওয়া উচিত এটা বুঝতে শিখে। অনেক
পুরানো বন্ধু হারিয়ে যায়। অনেক নতুন বন্ধু আসে। কিন্তু বুঝতে পারে যে তারাও একদিন
চলে যাবে।
বেশিরভাগের হতাশার পাল্লাটাই এসময় ভারী থাকে। ২১-২২ বছরে সাধারনত
ভার্সিটি লেভেলের ৩য় বা ৪র্থ বর্ষে থাকে। আগের বছরগুলোতে যারা পড়াশোনায় ফাকি দেয়
তারা এসময় এসে সিরিয়াস হয়। মাথার ভেতর সারাক্ষন ঘুরঘুর করে যে পাশ করে বের হতে
হবে। একটা চাকুরী জোগাড় করতে হবে। নিজেকে ইস্ট্যাবলিশ করতে হবে। অনেকে এসময় থেকেই
বিদেশ যাওয়ার জন্য জোড় প্রচেষ্টা শুরু করে। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তারা হতাশ।
আসলে দেশটা সুন্দর, কিন্তু মানুষগুলো বড্ড খারাপ।
২১-২২ বছর বয়সে একটা গাম্ভীর্য এসে যায় কথাবার্তায়। এ বয়সে বুঝতে
শুরু করে যে সবার সামনে সব কথা বলা যায়না। মানুষ বুঝে কথা বলতে হয়। আবার সবার
সামনে নিজের সব রুপ বা কোন দূর্বলতা প্রকাশ করে ফেলতে হয়না। খুব খেয়াল করে চলাচল
করতে হয় এই সমাজে। কেননা Survival for the fittest. এই দুনিয়ার সংগ্রামে যারা টিকে
থাকতে পারবে না তারা হারিয়ে যাবে।
আমার বন্ধুদের দেখছি। এখন ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা অতটা
এক্টিভ নেই। অনেকেরই এগুলো আর ভালো লাগেনা। ভালো লাগেনা নিজেকে শো অফ করতে। ভালো
লাগে না আর একের পর এক মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ শুনে রিপ্লাই দেওয়া। ভালো লাগেনা
রাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা হোয়াটসঅ্যাপ বা ভাইবারে কথা বলা। ভালো লাগেনা সারাদিন
মুভি বা সিরিয়াল দেখা। ভালো লাগেনা রাত জেগে গেইম খেলা। ভালো লাগেনা অনেক কিছুই যা
আগে ভালো লাগতো অনেক।
এককালের তুখোড় প্লেবয় যে কিনা মাসে ৩-৪টা করে মেয়ে পটাতো একসাথে, এ
বয়সে সে শুধু খুজে পেতে চায় একজনের ভালোবাসা। যে বন্ধু মদ ও গাজা খেয়ে সারাদিন
ভবের কথা বলতো, বব মার্লে যার আদর্শ ছিলো আজ তাকে বিষন্ন মনে জীবন নিয়ে চিন্তা
করতে দেখা যায়। এককালের মেটালহেড, যে মেটাল মিউজিকের বিশাল ফ্যান ছিলো তাকে
রবীন্দ্রসংগীত শুনতে দেখা যায়। এ বয়সে এসে মেয়েদের মেকআপ মাখা সেলফি আর ন্যাকামি
দেখে আর কোন বাসনা জাগেনা। এ বয়সে এসে একজন ছেলে একজন মেয়ের মাঝে এমন কিছু খুজে
পেতে চায় যা নিয়ে সে সারাজীবন থাকবে। সে আর বেইলি রোডের রেস্টুরেন্টে অর্থহীন
ডেটিং, রিকশায় ঘুরাঘুরি, রাত জেগে কথা বলা এবং আসতে আসতে হারিয়ে যাওয়া - এসব
চায়না। এ বয়সে একজন মেয়েও আর দেখতে স্মার্ট, বডি বিল্ডিং করে এমন ছেলের সাথে অর্থহীন
ডেটিং আর ঘুরাঘুরি চায়না। সে এখন ছেলের মাঝে প্রতিভা খুজে, তার ভবিষ্যৎ দেখার
চেষ্টা করে। বাস্তব প্রেম করতে চায় সবাই। অনেকেই এসময় বিয়ে করে ফেলে।
মধ্যবিত্তদের এসময় পাহাড় সমান উচু রেসপনসিবিলিটি এসে ভর করে। অনেক
কিছু দেখাশোনা করতে হয়। খুব বুঝেশুনে চলতে হয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবল ভয় হয়। সকালে
ঘুম থেকে উঠে আর চোখ খুলতে ইচ্ছে হয়না। ভালো লাগেনা এই জীবনটাকে ফেইস করতে। শত
হা-হুতাশ আর না পাওয়ার মধ্যেই এগিয়ে যেতে হয়। কাটে নির্ঘুম রাত আর খেতে ভুলে যাওয়া দিন।
আমরা ২১-২২ বছর বয়সে যা স্বপ্ন দেখি তার প্রায় সবই আগামী ১০ বছরের
মধ্যে হওয়া উচিত। ১০ বছর পর আমরা যে লাইফটা লিড করবো তাই হলো এই বয়সে ভাবা ড্রিম
লাইফ। কারো স্বপ্ন সত্যি হয়, কারোটা আংশিক আবার কারো সত্যি হয়না। হয়তোবা আজ থেকে
১০ বছর পরে এই বয়সটাকে মনে করে হাসবো আর বলবো "আহ, কি দুশ্চিন্তাটাই না করতাম
তখন।" হয়তোবা আফসোস করতে করতে ভাববো, "ইস! তখন যদি একটু কষ্ট করতাম। তখন
যদি এটা করতাম। তখন যদি... "। হয়তোবা এই বয়সটাকে ভেবে কিছু বলা হবেনা।
This comment has been removed by a blog administrator.
ReplyDeletevery good.advice
ReplyDelete