Sunday, February 2, 2020

কলকাতা ভ্রমণ - পর্ব দুই


৩য় দিন 

আজ ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরী হয়ে গেলো। উঠে দেখি দুপুর বারোটা বেজে গিয়েছে। কলকাতায় আসার আগে বাসা থেকে ও কিছু বন্ধুবান্ধব শপিং লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে। এই শপিংগুলো শেষ না হলে আসলে ঝামেলা মিটছে না। ট্যুরের বাজেটের সাথে শপিংয়ের টাকার হিসেব মিলে গোলমাল লাগছে। তাই ঠিক করেছি আজ আমি সব শপিং সেরে ফেলবো।


চলে গেলাম নিউ মার্কেটে। সেখানে এগ চিকেন রোল আর চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ একসাথেই করে ফেললাম। মেডিসিনের দোকানে বেশ কিছু সময় গেলো। ইন্ডিয়ার মেডিসিন ভালো কিনা জানিনা তবে এখানে একসাথে অনেক ওষুধ কিনলে বেশ ভালো ডিসকাউন্ট দেয়। এরপর গেলাম "শ্রী লেদারস" এর শোরুমে। প্রথমদিন নিউ মার্কেটে এসেই সবার হাতে এই দোকানের ব্যাগ দেখেছি। শোরুমে ঢুকেই বুঝলাম কারণটা কি। বেশ কম দামে চামড়ার জুতো, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্ট বিক্রয় করা হচ্ছে। আমি এক জোড়া স্যান্ডেল, বেল্ট আর মানিব্যাগ কিনলাম। আমার বন্ধুরাও আরো কিছু শপিং করলো। এভাবে নিউ মার্কেটেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো। 

নিজামের এগ চিকেন রোল
 
শপিং ব্যাগ হোটেল রুমে রেখে আবার বের হলাম। বন্ধু নতুন মোবাইল কিনবে। হলুদ অ্যাম্বাসাডর ট্যাক্সিতে করে চললাম সাউথ সিটি শপিং মলে। এটি বেশ বড় একটি মল আমাদের দেশের বসুন্ধরা সিটির মত। দামী দামী ইন্টারন্যাশনাল সব ব্র্যান্ডের দোকান চারদিকে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ওয়ানপ্লাস মোবাইল ফোনের শোরুম খুঁজে বের করলাম। বন্ধু ওয়ানপ্লাস সেভেন টি ফোনটি কিনলো। তবে আমার মতে দেশের বাইরে থেকে ফোন কেনাটা বোকামী। অল্প কিছু টাকা কম লাগলেও মোবাইল নষ্ট হলে আবার সেই দেশে যেতে হবে। আর আমাদের দেশে যে অরিজিনাল মোবাইল পাওয়া যায়না এমনটাও নয়। 

সাউথ সিটি শপিং মল
কেনাকাটা পর্ব শেষ করে উবার ডাকলাম। উবার রিকুয়েস্ট করে আমরা গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি৷ দেখি উবার আসছে না। একটু ভেতরে পার্কিং লটেই দাড়িয়ে আছে। কল দিকে সে পয়েন্টে আসতে বললো। বুঝলাম উবার এখানে পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও আসবে না। যাত্রীদের নির্দিষ্ট পয়েন্টে যেতে হয়। 


৪র্থ দিন


আজ দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে বের হলাম সল্ট লেক যাবার উদ্দেশ্যে। সেখানে Decathlon এর শোরুম আছে। এখান থেকে আমি ব্যাকপ্যাক কিনবো আর আমার বন্ধু সুফি ট্রাভেল গিয়ার কিনবে। এবারও হলুদ ট্যাক্সি নিলাম। উঠার আগে আমরা এই ঐতিহ্যবাহী ইয়েলো ট্যাক্সির সাথে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম। 

হলুদ ট্যাক্সির ভেতরে
Decathlon এ যেয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ! ভ্রমণপ্রেমী হওয়ায় ট্রাভেল রিলেটেড যা দেখি তাই ভালো লাগে। এখানে প্রচুর কালেকশন আর দামও বেশ কম। ৪০ লিটারের একটি ব্যাকপ্যাক নিলাম। আর ট্রাভেল রিলেটেড টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনলাম। এখান থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। 


কফি হাউজে যাবো এখন আমরা। গুগল ম্যাপস দেখে বুঝলাম আমরা বেশ দূরে চলে এসেছি। ট্যাক্সি বা উবারে ভাড়া বেশি আসছে তাই ঠিক করলাম পাবলিক ট্র‍্যান্সপোর্টে যাবো। কলকাতার মেট্রো বা ট্রাম কোনটিই ব্যবহার করা হয়নি। মেট্রোর স্টেশন দেখলাম এখান থেকে বেশ দূরে। আর ট্রামের কথা নাই বললাম। এই কদিনে ট্রামে কোথা থেকে যাত্রী উঠে তা কখনো দেখিনি। আর ট্রামের যে ধীর গতি এর চেয়ে হেটে হেটে দ্রুত যাওয়া যাবে। অগত্যা বাস ধরার চেষ্টা করলাম। মিনিট বিশেক পর মুড়ির টিন মার্কা লোকাল বাস পেয়ে উঠে পড়লাম। ঢাকা শহরের বাসের মতই ভিড়, চাপাচাপি। প্রচুর জ্যাম পেড়িয়ে কফি হাউজের কাছের বড় রাস্তায় বাস থেকে নেমে পড়লাম। 


গুগল ম্যাপ দেখে হেটে হেটে অলিগলি দিয়ে যেতে লাগলাম। যেতে যেতে বুঝলাম ম্যাপে আরেকটু কাছে মনে হলেও বেশ খানিকটা পথ বাকি। এদিকে আবার কোন রিক্সা বা টানা গাড়িও দেখলাম না। প্রায় চল্লিশ মিনিট হেটে পৌছালাম কাংখিত কফি হাউজে। 


কিন্তু হায়! ৯টার বেশি বেজে গিয়েছে। সবাই বের হয়ে যাচ্ছে। কফি হাউজ বন্ধ হতে চলেছে। কোন খাবার অর্ডার দেওয়া গেলো না। ভিতরে গিয়ে কিছুক্ষন ঘোরাফেরা করলাম। তবে পুরো কফি হাউজটিই আমরা খালি পেলাম। কিছু ছবি তুলে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। 

ফাকা কফি হাউজ



কফি হাউজ থেকে বের হয়ে রাস্তায় ডিম টোস্ট আর শরবত খেলাম। এরপর হাটা দিলাম কলেজ স্ট্রিট ধরে। রাস্তার পাশে প্রচুর বইয়ের দোকান। তবে বেশিরভাগই বন্ধ। সকালে সময় করে বইয়ের দোকানে আসতে হবে। 

কলেজ স্ট্রিটের রাস্তা

আরাফাতের কাবাব

কলকাতা ভ্রমণ নিয়ে আমার অন্যান্য ব্লগগুলোঃ
কলকাতা ভ্রমণ পর্ব ১
 

কলকাতা ভ্রমণ পর্ব ৩

0 comments:

Post a Comment

Hi ! I'm Raad. And this my personal blog. Welcome to my blog.