Sunday, February 2, 2020

কলকাতা ভ্রমণ - পর্ব এক

এত বড় হয়ে গেলাম অথচ দেশের বাইরে কখনও যাওয়া হয়নি। গতবছর অনেক ঝক্কি ঝামেলা পার করে পাসপোর্ট করালাম। তখনও জানিনা কোথাও যাবো কিনা। বছরের শেষের দিকে তিন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম ইন্ডিয়া যাবো। প্ল্যান হলো কলকাতায় যাওয়ার। কলকাতা শহরটি ভালো করে দেখে বেড়াবো কয়েকদিন। ভিসা পেতে তেমন সমস্যা হলো না। অফিস থেকে ছুটিও ম্যানেজ করা হলো। 


যাত্রা শুরু

প্ল্যানমাফিক ১৭ জানুয়ারীর শুক্রবারে শীতের রাতে রওনা দিলাম। আমাদের বাস ছিলো রাত ১১টায়। ১১টায় কলাবাগান বাস কাউন্টার থেকে সোহাগের নন-এসি বাস ছাড়লো। আমরা ভয় পাচ্ছিলাম কুয়াশার জন্য ফেরী পারাপারে দেরী হবে কিনা। এমনও শুনেছি যে রাতে ফেরীর জন্য দাড়িয়ে কুয়াশার জন্য ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো ছিলো ঐদিন রাতে কোন কুয়াশা ছিলো না। ফেরী পার হয়ে তারপর অনেক দ্রুতই আমরা বেনাপোল বর্ডারে পৌঁছে গেলাম। ভোর ৫টায় তখনও অন্ধকার। বর্ডার খুলেনি। চা ও পাউরুটি দিয়ে নাস্তা সেরে ফেলি।

বর্ডার খুললে সেখানে চেকিং হয়। বাংলাদেশ বর্ডারে চেকিংয়ের সময় ১০০ টাকা ঘুষ দিতে হলো সবাইকেই। ইন্ডিয়ার বর্ডারে আবার কিছু দিতে হয়নি। তবে ইমিগ্রেশনের লোকের ব্যবহার খুব খারাপ। চিকিৎসার জন্য অনেক বয়স্ক, স্বল্পশিক্ষিত মানুষ ইন্ডিয়া যায়। তাদের সাথে ইমিগ্রেশন অফিসারেরা যাচ্ছেটাই ব্যবহার করে। ফর্ম ফিল-আপ করতে তাদের সমস্যা হয়। এরকম কয়েকজনের ফর্ম ফিল-আপ করে দিলাম। নিজেদের দেরী হয়ে যাচ্ছিলো দেখে ফর্ম ফিল-আপে ইস্তফা দিয়ে বের হবার লাইনে দাড়িয়ে গেলাম। 

বর্ডারে কাগজপত্রের কাজ শেষ


১ম দিন

তখন বাজে প্রায় ৮টা। ইন্ডিয়ার মাটির স্পর্শ পেলাম। দেশের বাইরে কোথাও এই প্রথম পা রাখলাম। সোহাগের ইন্ডিয়ার সাইডের বাসে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরেই বাস ছেড়ে দিলো। বাংলাদেশের সাইডের বাস বর্ডার পর্যন্ত এসে থেমে যায়। ইন্ডিয়ার পার থেকে ঐ কোম্পানীরই আরেকটি বাস যায়। তবে এসি বাসগুলো শুনেছি ডিরেক্ট যায়। ইন্ডিয়ার সাইডের বাসটি এসি এবং ভেতরে বসতেই ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি ভাষায় যাত্রীদের কথাবার্তা শুনলাম।

ইন্ডিয়ার কোন এক হাইওয়েতে বাসের যাত্রাবিরতি

৪ ঘন্টার বেশি জার্নি শেষে বাস আমাদের নামিয়ে দিলো। কোথায় নামালো ঠিক জানিনা। সেখান থেকে হাটা দিলাম। আগে থেকে হোটেল ঠিক করা হয়নি। একজন লোক হোটেলের খোজ দেবার জন্য এগিয়ে এলো। তার সাথে হোটেল দেখতে গেলাম। ৩টি হোটেল দেখার পর "হোটেল ম্যাজেস্টিক ইন্টারন্যাশনাল" পছন্দ হলো। এটি রাফি আহমেদ খির্দওয়া স্ট্রিটে। বুঝলাম এটি মুসলিম এরিয়া। এখানের হোটেলগুলোর লিফট খুবই অদ্ভুত। লিফটের দরজায় কাচিগেইট থাকে। একটি বাইরের গেট আরেকটি লিফটের সাথে লাগানো ভেতরের গেইট। দুইটি গেইট টেনে বন্ধ করলে তবেই লিফট চলা শুরু করবে। লিফট চলা শুরু করলে দেখা যায় যে ফ্লোর পার হচ্ছি একটি একটি করে। লিফটের গেট থেকে হাত বের করলেন তো মরলেন!

হোটেল ম্যাজেস্টিকে যাচ্ছি


দুপুরে একটি হোটেলে ভাত, মুরগী, ভর্তা, ডাল খেলাম। দেরী করে যাওয়ায় সব ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিলো। খাবার খুব একটা পছন্দ হলো না। খাওয়ার পর্ব শেষ করে চলে গেলাম নিউ মার্কেট। সেখানে নানান মানুষ ও তাদের কেনাকাটা দেখতে লাগলাম। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে এসেছে এবং সবার হাতেই শপিং ব্যাগ। "শ্রী লেদার" লেখা ব্যাগ দেখলাম খুবই কমন। আজ কিছুই কিনলাম না। সন্ধ্যার পর রুমে চলে এলাম। 

রাতে খেতে বের হলাম। "নবাব ইটিং হাউজ" নামের একটি হোটেল পেলাম। সেখানে গরুর চাপ, শিক কাবাব আর বিরিয়ানি খেলাম। মাত্র ৭০টাকায় খুবই মজাদার বিরিয়ানি। খাওয়ার পর রাস্তায় বেশ খানিকটা হাঁটাহাঁটি করে খাবার একটু হজম করে চলে গেলাম রুমে।   

২য় দিন

আজ রবিবার। এদিন এখানে সাপ্তাহিক ছুটি। তাই সবকিছু বন্ধ। আমরা ঠিক করলাম আজ সারাদিন যেখানে আছি তার আশেপাশে হেটে হেটে ঘুরে বেড়াবো। রাস্তার পাশে যা পাবো তাই খাবো। মানে কোন প্ল্যান ছাড়া যা "খুশি তাই করো" টাইপের একটি দিন। রাস্তায় মমো পেয়ে গেলাম। সেটা দিয়েই সকালের নাস্তা সারলাম।

দুপুরে "কস্তূরী" রেস্টুরেন্টে বাংলা খাবার খেলাম। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে পেয়ে গেলাম মিষ্টির দোকান। গোলাবজামুন, রসমালাই, রসগোল্লা, সন্দেশ আর দই গপাগপ মুখে পুরলাম। মিষ্টি খেয়ে দুই কদম হাটতেই পেলাম পানিপুরি। আমাদের দেশের ফুসকার মতই। খোলসটা বড়, টক বেশি দেয় আর আলু দেয় খুবই কম। এক প্লেটে একসাথে সব না দিয়ে একটি একটি করে দিবে। জিনিসটা ভালোই তবে আমাদের ফুসকার থেকে মজাদার নয়।

মজাদার গুলাবজামুন

সন্ধ্যার পর বের হয়ে পার্ক স্ট্রিট গেলাম। পার্ক স্ট্রিটকে ঢাকা শহরের গুলশান-বনানীর সাথে তুলনা করা যায়। অভিজাত এলাকা। অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল শপ রয়েছে। এডিডাসের শোরুমে গেলাম। এখানে ডিসকাউন্ট চলছে। এক জোড়া করে জুতা কিনলাম সবাই। আমি Wildcraft এর দোকানে ব্যাগ দেখলাম কিন্তু পছন্দ হলো না।

ঘুরতে ঘুরতে ক্ষিদা লেগে গিয়েছে। পার্ক স্ট্রিটে হাটতে গিয়ে দেখা পেলাম Hard Rock Cafe। এটি একটি ইন্টারন্যাশনাল চেইন ক্যাফে যা অন্যান্য অনেক দেশে রয়েছে। ভেতরে ঢুকতেই আবছা আলো-ছায়ার খেলা দেখলাম। সামনে বড় স্টেজ। সেই স্টেজে গান হচ্ছে। এখানে লাইভ কনসার্ট হয়। তবে আজ কোন ব্যান্ড আসেনি। তাই রক মিউজিক ভিডিও ছেড়ে রাখা হয়েছে। এখানে খাবারের দাম বেশি। আমরা একটা ডিনার প্ল্যাটার ও ককটেইল অর্ডার দিয়ে তিনজন খেলাম।

হার্ড রক ক্যাফে

 
হার্ড রক থেকে বের হতে হতে রাত হয়ে গেলো প্রায় ১টা। পার্ক স্ট্রিট দিয়ে হেটে হেটে হোটেলে গেলাম। রাতের পার্ক স্ট্রিট অসাধারণ। রাস্তার পাশের ক্লাব ও রেস্টুরেন্টগুলো থেকে মানুষ বের হচ্ছে। নিয়ন লাইটের আলো আর সাথে হালকা শীত। বেশ জমেছিল কিন্তু ব্যাপারটা দাদা!

কিন্তু যেতে যেতে পথে হেটে হেটে লেগে গেলো পেটে ক্ষিদে। আর ক্ষিদে লাগলে খেতে তো হবেই। ঢুকলাম "দস্তরখান" রেস্টুরেন্টে। শিক কাবাব, হাড়িয়ালি কাবাব, চিকেন মালাই কাবাব আর পরোটা খেলাম। সাথে এক প্লেট বিরিয়ানিও ছিলো। এর মধ্যে চিকেন মালাই কাবাবটা সেরা ছিলো। খাবার শেষে পাশে এক আজব দোকান দেখলাম। দুধের দোকান! হোটেলের মধ্যে শুধু দুধ বেচা হচ্ছে আর বাটি ধরে টেবিলে নিয়ে কলকাতার দাদারা সুড়ুত সুড়ুত শব্দ করে চুমুক দিয়ে দুধ খাচ্ছে। খেতে ইচ্ছে করলেও পেতে আর জায়গা ছিলো না। পরে কোন এক সময় খাওয়া যাবে।

দস্তরখানে কাবাব খাওয়া

কলকাতা ভ্রমণ নিয়ে আমার অন্যান্য ব্লগগুলোঃ
কলকাতা ভ্রমণ পর্ব

কলকাতা ভ্রমণ পর্ব ৩

0 comments:

Post a Comment

Hi ! I'm Raad. And this my personal blog. Welcome to my blog.